Bangladesh Ex-Cadets' Association (BECA) UTC,UOTC & BNCC EX-MEMBER

History of the BECA
History of the BECA

বেকা জন্ম ইতিহাস

মোঃ মাহবুব আলম

বেকা জন্ম পরিচয়ঃ সমগ্র বাংলাদেশের UTC, UOTC BNCC এর এক্স-ক্যাডেটদের নিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এক্স-ক্যাডেটস্ এসোসিয়েশন (বেকা) ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই এসোসিয়েশন ৪৪টি জেলা ইউনিট এবং ৬৭টি অঙ্গ ইউনিট নিয়ে প্রায় ৬৭ হাজার সদস্য নিয়ে গঠিত। সদস্যরা সকলেই সামরিক প্রশিক্ষিত এক্স-ক্যাডেট এবং উচ্চ শিক্ষিত। ১৯৮২ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারী বেকা আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৮১ সালের ২৭ ডিসেম্বর রোজ রবিবার (সাপ্তাহিক সরকারি বন্ধ) ঢাকা কিছুসংখ্যক এক্স-ক্যাডেট নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় ২০, গ্রীন রোড বাসায় এক্স-ক্যাডেটদের নিয়ে একটি এসোসিয়েশন গঠনের প্রাথমিক আলোচনা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সে সময় আমিনুর রশিদকে আহবায়ক .কে.এম রেজাউল হক ঝুনুকে সদস্য-সচিব করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।  পরবর্তীতে লেঃ কর্ণেল মতিউর রহমান (অবঃ) এবং এম মাহমুদুল হায়দার কে যথাক্রমে সভাপতি সাধারন সম্পাদক মনোনিত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বেকা আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রথম এক্স-ক্যাডেটস্ পুনর্মিলনী স্মরনীকা প্রকাশ করে ২৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২। বেকা গঠনে ১৯৮১ সালের ২৭ ডিসেম্বর আলোচনার কোন দালিলিক প্রমান আমাদের কাছে নাই, তবে সেই সময় উপস্থিত থাকা সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২ প্রকাশিত স্মরনীকা মূল কপি এবং প্রথম এক্স-ক্যাডেটস্ পুনর্মিলনী/৮২ অন্যান্য কাগজপত্র দালিলিক প্রমান হিসেবে পাওয়া গেছে। এক্স-ক্যাডেটদের প্রানের সংগঠন বাংলাদেশ এক্স-ক্যাডেটস্ এসোসিয়েশন (বেকা) প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৮১ সনের মাঝামাঝি সময় হতেই শুরু হয় যোগাযোগ। সময় সরকারি তিতুমীর কলেজ এর ১৯৭৮ সনের UOTC- শেষের দিকে এবং ১৯৭৯ সনের বিএনসিসি প্রথম দিকে বিমান শাখা এক্স-সিইউও এম মাহমুদুল হায়দার এর বাসায় (২০, গ্রীন রোড, ঢাকা) প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বেকা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জন এক্স-ক্যাডেট স্বপ্ন রচনা করেন। ২০ গ্রীন রোডের বাসাতেই কয়েকবার মিলিত হয়ে কাঠামো গতভাবে বেকাকে সাজানো হয়। এরপর একজন গ্রহনযোগ্য সর্বজনিন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে বেকা চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনিত করার চেষ্টা চলে। অবশেষে এগিয়ে আসেন UTC-UOTC- প্রান পুরুষ এবং বিএনসিসি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব লেঃ কর্ণেল মতিউর রহমান (যিনি এক্স-ক্যাডেট ছিলেন -বি এম কলেজ,বরিশাল (১৯৩২-৩৩) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৩৪-৩৬) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিভাগের ডাইরেক্টর (১৯৩৬-১৯৬৬) ব্রিটিশ শাসনামলে তিনিই প্রথম ITFO হিসেবে যোগ দিয়ে পাকিস্তান শাসনামলে লেঃ কর্ণেল (PTFO) পদ প্রাপ্ত হন। লেঃ কর্ণেল মতিউর স্যার এর বাসা-( বাসা-৫৫৫, রোড-১৫, ধানমন্ডি, ঢাকা) তেও কয়েক দফা আহবায়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয় নিবেদিত ভালো এক্স-ক্যাডেট এবং বড় পদের এক্স-ক্যাডেটদের সাথে কথা বলে বেকা আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করা হবে।

এরপর মতিউর স্যার সহ দফায় দফায় আলোচনা চলে বেকা আত্মপ্রকাশের দিনক্ষন নিয়ে। এর মধ্যে স্মরনীকায় তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার,খাদ্য কৃষি মন্ত্রী ক্যাপ্টেন আবুদল হালিম চৌধুরী অবঃ (UOTC- এক্স-ক্যাডেট এডজুটেন্ট), সেনাবাহিনী প্রধান লেঃ জেনারেল এইচ এম এরশাদ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্স-ক্যাডেট ১৯৫০), নৌ বাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম খান (ঢাকা কলেজ এর এক্স-ক্যাডেট ১৯৪৮-৫০), বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান, বিএনসিসি প্রথম পরিচালক কর্ণেল মীর্জা শফি আহমেদ (UOTC- এক্স-ক্যাডেট) বানী প্রদান করেছেন। বেকা গঠনের উদ্দেশ্য বিভিন্ন নীতি তুলে স্মরনীকা প্রকাশিত হয়। শুরু হয় পথ চলা- বেকা আত্মপ্রকাশের।

২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৮২ সনে বারডেম মিলনায়তন, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম এক্স-ক্যাডেট পুনর্মিলনী/৮২ অনুষ্ঠান। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য কৃষি মন্ত্রী ক্যাপ্টেন আবুদল হালিম চৌধুরী অবঃ। সে অনুষ্ঠানে প্রকাশিত স্মরনীকায় প্রকাশ করা হয়। বেকা প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদের নামের তালিকাঃ সেই পরিষদে লেঃ কর্ণেল মতিউর রহমান (অবঃ) কে চেয়ারম্যান এবং মোঃ আমিনুর রশীদ, কে এম রেজাউল হক ঝুনু দ্বয়কে ভাইস চেয়ারম্যান এবং এম মাহমুদুল হায়দারকে মহাসচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠাকালিন কমিটি (১৯৮২-৮৩) গঠন করা হয়। গৌরব গাঁথা প্রতিষ্ঠাতার ইতিহাস এখন প্রেরণার ডাক দিয়েছে। গত ২২-০৯-২০১৯ ইং তারিখে বেকা ২০১৭-২০১৯ মেয়াদের জাতীয় নির্বাহী পরিষদের ২৮তম সভায় সে মোতাবেক বেকা প্রতিষ্ঠা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ করার প্রস্তাব করেন সচিব (সাংগঠনিক) মোঃ মাহবুব আলম। সময় সকল প্রমানপত্র যাচাই-বাছাই করে  সভায় উপস্থিত সদস্যবৃন্দ বেকা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসেবে ২৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮২ পালনে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। করোনা জনিত মহামারি কারনে বছর পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী নব নির্বাচিত জাতীয় নির্বাহী পরিষদ (২০২১-২০২৩) আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। তাই বর্তমান বেকা জাতীয় নির্বাহী পরিষদ অনেক বিশ্লেষণ করে শক্ত দলিলের মাধ্যমে প্রথম "এক্স ক্যাডেটস পুনর্মিলনী/৮২" কে বেকা' প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসাব ধরে "২৮ ফেব্রুয়ারি/৮২" কে প্রতিষ্ঠা কাল গণনাসহ গত ২০২১ সন হতে তা পালন করা শুরু করেছে।

বেকা ইউনিট সমূহঃ

০৫ নভেম্বর ১৯৮৩ সনে এসোসিয়েশনের প্রথম জেলা ইউনিট হিসেবে চট্টগ্রাম ইউনিট অন্তর্ভুক্ত হয়। বেকা চট্টগ্রাম ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ নূরুল ইসলাম (MD - Solex Ltd, Osman Court, Ctg), সহ-সভাপতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য . মুহাম্মদ ইনাম উল হক (লেঃ কর্ণেল / বিটিএফও) এবং ডাঃ সিদ্দিকুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমডি, ষ্টান্ডার্ড ব্যাংক মামুনুর রশীদ। এরপর বছর পর ০১ জুন ১৯৮৭ সনে বেকা-ফেনী ইউনিট গঠন হয়। ফেনী জেলা এক্স-ক্যাডেট ওছমান হারুন মাহমুদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ফেনী ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়। এভাবে প্রথম ২টি জেলা ইউনিটে অগ্রযাত্রা শুরু হলো বেকা'তে।

১০ জানুয়ারী ১৯৯১ সনে হোটেল শেরাটনে বার্ষিক পুনর্মিলনী/৯১ অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশ হতে এক্স ক্যাডেটরা এই পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণ করেন। পুনর্মিলনী উপলক্ষে স্মরণিকা প্রকাশ করে বেকা। এসোসিয়েশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল রেজাউল জলিল (অবঃ) এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে মহাসচিব আজম খান বক্তব্য দেন আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে। ফাইভ স্টার হোটেল শেরাটনের এক্স ক্যাডেটস এসোসিয়েশন যে আভিজাত্য ফুটে তুলে সেই সময়ের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল তা ছিল একটি স্বপ্ন। এই স্বপ্ন ইতিহাসে স্থান পায় এসোসিয়েশন গাম্ভীর্যের প্রতীক। স্বপ্ন-চূড়ার উপরে কেউ বুঝে নাই একদিন এসোসিয়েশনের এই অনুষ্ঠান লেখা হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোর জন্য। স্যালুট সেদিনের আয়োজকদের। সেই সময়ের সিলেট, রামগঞ্জ কুমিল্লা ইউনিটকে বেকা' নতুন ইউনিট হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত ইউনিট রাখা হয় রাজশাহী ময়মনসিংহকে। নবগঠিত কুমিল্লা ইউনিট সভাপতি বিটিএফ অফিসার ক্যাপ্টেন মোঃ আবদুল হাকিম নেতৃত্বে সহ-সভাপতি অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ শাহজাহান সিরাজ, কোষাধ্যক্ষ শাহজাহান চৌধুরী, প্রস্তাবিত ময়মনসিংহ ইউনিট হতে আনন্দ মোহন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আজিজ আহমেদ সাদেক  রেজা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালেহ যোগদান করেছিলেন। কুমিল্লা ইউনিট (০১-০৫-১৯৮৮), রামগঞ্জ ইউনিট (১৭-০৪-১৯৮৯),ময়মনসিংহ ইউনিট ১২-০১-১৯৯০, রাজশাহী ইউনিট ১৫-০১-১৯৯০, সিলেট ইউনিট ০৯-১২-১৯৯২, বগুড়া ইউনিট ১৩-০৪-১৯৯৬ বেকাতে জেলা ইউনিট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বেকা উপরোক্ত সকল ইউনিট একত্রিত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু পরবর্তীতে বেশ কিছু জেলা ইউনিট তাদের কার্যক্রম ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। ২০০০ সনের পর হতে কুমিল্লা,ময়মনসিংহ,রাজশাহী,সিলেট ইউনিট এর বেকা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। দুই-একজন উক্ত জেলা ইউনিটের এক্স-ক্যাডেট ছাড়া কেউই কেন্দ্রীয়ভাবে এই সংগঠনের যুক্ত ছিলেন না। ২০০১ সনে দিনাজপুর ইউনিট বেকা সাথে যুক্ত হলে দিনাজপুর ইউনিট এর প্রতিষ্ঠিতকাল ৩০-১০-১৯৯৬ সনের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে উক্ত ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মাহবুব আলম বেকা, জাতীয় নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। প্রথমে তাকে বেকা, জাতীয় নির্বাহী পরিষদে কো-অপ্ট সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে পরে নির্বাহী সদস্য, সচিব (প্রচার), যুগ্ম মহাসচিব সচিব (সাংগঠনিক) হিসেবে দায়িত্বপালন করে বেকাকে গতিময় শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা করেন, বর্তমানে তিনি বেকা মূখপাত্র। গত ২৯-০১-২০১১ স্থগিত হওয়া ইউনিটগুলোর মধ্যে রামগঞ্জ ইউনিটকে পুনঃগঠিত করে লক্ষীপুর জেলা ইউনিটে একত্রিকরন করে। এরপর ক্রমান্বয়ে ০১-০৯-২০১৩ তারিখে সিলেট ইউনিট, ২১-০৩-২০১৫ তারিখে রাজশাহী ইউনিট এবং ০১-০১-২০২১ তারিখে ময়মনসিংহ ইউনিট পুনঃগঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরপর নতুন ইউনিট হিসেবে যথাক্রমে- ১২-১২-২০০০ তারিখে নারায়নগঞ্জ ইউনিট, ২০-০৭-২০০৭ তারিখে রংপুর ইউনিট, ০৩-১১-২০১১ তারিখে ঢাকা জেলা ইউনিট, ২৭-১২-২০১১ তারিখে খুলনা ইউনিট, ০৩-০১-২০১২ তারিখে ঠাকুরগাঁও ইউনিট, ০১-০৬-২০১৪ তারিখে নোয়াখালী ইউনিট, ০১-০৯-২০১৫ তারিখে মুন্সিগঞ্জ ইউনিট, ০৪-০৭-২০১৫ তারিখে ঢাকা জেলাকে ৩টি ইউনিটে বিভক্ত করে ঢাকা জেলা, ঢাকা উত্তর সিটি এবং ঢাকা দক্ষিন সিটি ইউনিট, ০৭-০৭-২০১৫ তারিখে যশোর ইউনিট, ২২-১২-২০১৫ তারিখে মৌলভীবাজার ইউনিট, ২১-০২-২০১৬ তারিখে কক্সবাজার ইউনিট, ১৪-০৪-২০১৬ তারিখে কুষ্টিয়া ইউনিট, ২৪-০৩-২০১৭ তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইউনিট, ২৮-০৩-২০১৭ নওগাঁ ইউনিট, ৩০-০৩-২০১৮ তারিখে সুনামগঞ্জ ইউনিট, ২১-১০-২০১৮ তারিখে বরিশাল ইউনিট, ০৫-০২-২০২০ তারিখে হবিগঞ্জ ইউনিট গঠিত হয়। ছাড়াও আহবায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে যথাক্রমে- ভোলা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নাটোর, সাতক্ষিরা, নরসিংদী, নেত্রকোনা, নড়াইল, মেহেরপুর, গাইবান্ধা, চাঁদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, বি-বাড়িয়া ইউনিট সমূহ। বেকাতে বর্তমানে ৪৪টি জেলা ইউনিট নিবিড়ভাবে কাজ করছে কেন্দ্রিয়ভাবে সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত জাতীয় নির্বাহী পরিষদ-এর নির্দেশনায়। সারাদেশের আজীবন সদস্যদের গোপন ব্যালটের ভোটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয় বছর পর পর। জেলা ইউনিট পরিচালনার জন্য সাধারন সদস্য উক্ত ইউনিটের আজীবন সদস্যদের সমন্বয়ে একই নিয়মে বছর পর পর জেলা কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। এক্স-ক্যাডেটদের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এটি একটি সেবামূলক-স্বেচ্ছাসেবক এবং সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। "ইতিহাস কথা বলে" - এমনটি মনে করে এটি লেখা শুরু করেছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি, এই ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে ভাল কাজ এবং এক্স ক্যাডেটদের অবদান - প্রকৃত না জানা কথা জেনে অন্যদের চিনতে সাহায্য করবে। দীর্ঘ ৪১ বছর পর এমন একটি স্বপ্নীল অভিব্যক্তি নিয়ে এই ঐতিহাসিক বিষয়ের নতুন পুরাতন এক্স ক্যাডেটসদের সাথে কথা হচ্ছে যেন এটা ইতিহাস লেখছি না - লেখছি "বেকা' আত্মজীবনী"! 

 

বেকা প্রতিষ্ঠাতাগণঃ

UTC, UOTC BNCC এর এক্স-ক্যাডেটদের প্রানের সংগঠন বাংলাদেশ এক্স-ক্যাডেটস্ এসোসিয়েশন (বেকা) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সনে। আমি ২১ বছর ধরে অনেক চেষ্টার পর খুজে পেয়েছি বেকা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের। এরা হলেনঃ

১। মোঃ আমীনুর রশীদ। (সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা ১৯৭৬ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৭-১৯৮০)

২। ফিরোজ আলম। (ঢাকা কলেজ ১৯৭৬ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৭-৮১

৩। রেজাউল হক ঝুনু। (আদমজী ক্যান্টঃ কলেজ তিতুমী কলেজ ১৯৭৬-৮০)

৪। এম মাহমুদুল হায়দার। (সরকারি তিতুমীর কলেজ ১৯৭৮-১৯৮১)

৫। লেঃ কর্ণেল মকবুল কাদের মিন্টু (অবঃ), (আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ১৯৭৬)

৬। মোঃ হামিদুর রহমান চেীধুরী সেলিম (সৈয়দ সৌরাওয়ার্দী কলেজ ১৯৭৩-৮০)

এদের মধ্যে শুধুমাত্র মোঃ হামিদুর রহমান চেীধুরী সাথেই আমার যোগাযোগ হয়নি। উনি ছাড়া জনকেই পেয়েছি। বেকা এই প্রথম প্রতিষ্ঠাতাদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী/২০২১ বেকা ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে।

তবে এখানে উল্লেখ্য যে, UTC, UOTC BNCC এর ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব লেঃ কর্ণেল মোঃ মতিউর রহমান (অবঃ) এর আপ্রান চেষ্টায় নিবেদিত নেতৃত্বে বেকা জন্ম লাভ করে। তবে বেকা প্রথম চীফ প্যার্ট্টন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোঃ এরশাদ, সাবেক মন্ত্রী ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী (অবঃ), বিএনসিসি প্রথম ডিজি কর্ণেল মির্জা শফি আহমেদ (অবঃ), বেকা সাবেক চেয়ারম্যান যথাক্রমে মেজর এম জামান, লেঃ কর্ণেল রেজাউল জলিল, মেজর জেনারেল আর এম গোলাম মুক্তাদির (অবঃ), মেজর জেনারেল এম রফিকুল ইসলাম (অবঃ), মোঃ হেলাল উদ্দীন, সাবেক মহাসচিব আনওয়ারুল খান মজলিস, আজম খান, এবিএম শফিকুল হক বেকাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জাতীয় সংগঠনে পরিনত করতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য তাঁদের প্রতি বেকা সকল সদস্যরা শ্রদ্ধাভরে স্মরন করবে আজীবন।

বেকা নাম লোগোঃ

বেকা গঠনের কত তারিখ হতে বৈঠক হয় বা প্রথম কবে বৈঠকে "বাংলাদেশ এক্স ক্যাডেটস এসোসিয়েশন (বেকা)" নামকরন করা হয় তা কিন্তু সুনির্দিষ্ট সময়- কাল জানা যায়নি। তবে নামের মর্মকথা খুব চমৎকার। এই নামের স্বার্থক অর্থে আমি সেই সময়ের মেধাবী এক্স ক্যাডেটসদের স্যালুট জানাই। বেকা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার হতে বর্তমান বেকা' লোগোটি ছিল। কে বা কখন এই এত সুন্দর লোগোটি তৈরী করেছে তা দালিলিক প্রমাণ আমার হাতে নেই। তবে এই লোগো তার চিত্রকর্মে প্রতি ভাষা আমাকে শিহরিত করে। শান্তি প্রতীক পায়রা- সশস্ত্র বাহিনীর প্রতীক তরোয়াল ক্রশ - লাল সবুজের রাষ্ট্রীয় চেতনা- সহ অনেক আকর্ষণীয় একটি লোগো।

 

বেকা গঠনতন্ত্র সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্তঃ

১৯৮১- ৮২ সনের প্রতিষ্ঠাতা পরিষদ লেঃ কর্ণেল মতিউর রহমান এম মাহমুদুল হায়দার প্যানেলে প্রথম সাধারণ সভা দ্বি বার্ষিক কার্য্য নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন আয়োজন করে ২০ মে ১৯৮৩ সনে ঢাকাস্থ বার্ডেন মিলনায়তনে। এর আয়োজনের জন্য কর্ণেল মতিউর রহমান স্যারের বাসা ( বাসা ৫৫৫ রোড ১৫ ধানমন্ডি /,ঢাকা) এবং এইচ এম চৌধুরী (এক্স CSM,UOTC) অফিস ২৭২, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকাতে দফায় দফায় সভা করা হয়। সেই ঐতিহাসিক সাধারণ সভাতে বেকা' গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। সম্পুর্ণ ইংরেজিতে লেখিত এবং সেই সময়ের সবচেয়ে আধুনিক নিয়ম নীতি মেনে এই বেকা গঠনতন্ত্র রচিত হয়। সেই সাধারন সভা নির্বাচনে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাহী পরিষদ (১৯৮৩- ১৯৮৪) লেঃ কর্ণেল মতিউর রহমান (অবঃ) কে চেয়ারম্যান এবং লেঃ কর্ণেল রেজাউল জলিল, পিএসসি (অবঃ), ব্রিগেডিয়ার ( পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) এম রফিকুল ইসলাম এনডিইউ,পিএসসি দ্বয়কে ভাইস চেয়ারম্যান এবং আনোয়ারুল হক খান মজলিসকে মহাসচিব করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী পরিষদের কমিটি গঠিত হয়।  আলোকিত নাগরিক গড়তে এক্স ক্যাডেট ছিল অলংকৃত ভূমিকায়।

গত ২০ মে, ১৯৮৩ সনে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত এবং গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হওয়ার পর রাষ্ট্র কর্তৃক এই এসোসিয়েশনের গ্রহনযোগ্যতা বহুগুণ বেড়ে যায়। পথচলা এবং পথ গড়াকে সঙ্গী করে পথপ্রদর্শকরা এগিয়ে নিয়ে বেকা'কে। প্রতিষ্ঠাতার ইতিহাস ছিল সকলের কাছে অজানা এবং লুকায়িত। সময়ের প্রয়োজনে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক তথ্য দিতে এই অধ্যায় শুরু হয়। কাউকে ছোট্ট বা বড় করা কিংবা কারও অবদানকে উচ্চ বা নিম্ন করা এই পর্ব উদ্দেশ্য নয়! আমি চেষ্টা করছি সঠিক তথ্যগুলো সকলের মাঝে তুলে ধরার।ইতিহাস থাকবে সকলের মাঝে। সৃষ্টি চেতনা অমুলক এবং দ্বন্দ্বহীন ইতিকথা। এখন আশি মুল কথায়:

এসোসিয়েশনের নাম-লোগো সব পরিচিত হতে থাকলো সারাদেশে। আজীবন সদস্য - সাধারণ সদস্য -সহযোগী সদস্য সংগ্রহ এবং তাদেরকে নিবন্ধিত সহ গঠনতন্ত্র বিধিমালা মোতাবেক একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে এই এসোসিয়েশন পরিচালিত হচ্ছে। সরকার সমাজসেবা মন্ত্রণালয় হতে সকল কাগজপত্র পরীক্ষা নিরিক্ষা করে অবশেষে সারা বাংলাদেশের UTC, UOTC, BNCC এর প্রাক্তন ক্যাডেটদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি অনুমোদন দেয় যার নিবন্ধন নম্বর: -০১৪৯৭, তারিখ: ০১-০৮-১৯৮৪।

 

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মৃত্যুবরণঃ

গত ২৮ জুলাই/৯১ বেকা' প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ক্যাডেট কোর এর ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব লেঃ কর্ণেল মতিউর রহমান (অবঃ) স্যারের মৃত্যুতে দুর্বল হয়ে পড়ে বেকা। তবে শোক কে শক্তিতে পরিনত করে আবারো জেগে উঠে বেকা এক্স ক্যাডেটরা।

 

বেকা নিউজ বুলেটিন প্রকাশঃ

জুলাই/৯৩ নুরুল্লাহ মাসুম কে সম্পাদক করে প্রতিমাসে প্রকাশ করা হত "বেকাসংবাদ (BECA NEWS)" জুলাই/৯৩ হতে এটা প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়। সকল কার্যক্রম বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য - নোটিশ -ঘোষণা -বেকা নিউজ হতে পেত সকল ইউনিট আজীবন সদস্যরা এতে সারাদেশে এক্স ক্যাডেটরা সহজে বেকা' কার্যক্রম কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়নের কৌশল অবলম্বন করতে পারছে। ১৯৯৯ সন হতে বেকা নিউজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২২ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান জাতীয় নির্বাহী পরিষদ (২০২১-২৩) তা চালুর বেপারে উদ্যোগী হলে ১৬ ডিসেম্বর/২০২১ সনে বেকা মুখপাত্র যুগ্ম-মহাসচিব মোঃ মাহবুব আলমকে সম্পাদক করে বেকা নিউজ ত্রৈমাসিক বুলেটিন নিয়মিত প্রকাশ শুরু হয়। বর্তমানে তা চলমান।

মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎঃ

০৬ জানুয়ারী/৯৬ বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস এর সাথে সাক্ষাৎ করেন বেকা' নেতৃবৃন্দ। দুপুর :১৫ মিনিটে বেকা' চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ছাড়াও ফেনী ইউনিট সভাপতি কাজী গোলাম মাওলা, সহ সভাপতি ডাঃ ইলিয়াস, সাঃ সম্পাদক এড. জাকির হোসেন সহ অন্যরা এতে যোগ দেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি বেকা' বিভিন্ন কার্যক্রম বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সামরিক প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এক্স ক্যাডেটসদের জাতীয় সংগঠন বেকা' ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এগুলো ছিল একটি স্বপ্ন, এটা একটি অঙ্গিকার, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক তথ্য বেকা নিয়ে অবান্তর কথা থেকে দুরে রাখবে এই ইতিহাস একটি মাইলফলক। আমার ১৯৮৬ সন হতে পর্যন্ত শুধু ক্যাডেট - এক্স ক্যাডেটস নিয়ে কাজ করার পরও মনে হয় এখনও এদের জন্য কিছু করতে পারলাম না। কাজ করতে না পারার কারণ হিসেবে দেখছি- বেকা' পতাকাতলে যোগ্য লোকের অভাব। গুটি কয়েক যোগ্য লোক দিয়ে এখনো বেকা ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে। এখন যোগ্য মানুষদের নিয়ে পতাকা তুলতে হবে - কাজ করতে হবে পিছনে না তাকিয়ে। ব্যাঙের ছাতার মত নামে বেনামে এক্স ক্যাডেট সংগঠন গড়ে উঠেছে কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছাড়াই। অযোগ্য নীতি হারা কিছু ব্যক্তিদের চরিত্র এখন এক্স ক্যাডেটদের কাছে সু-স্পষ্ট হয়েছে। বেকা নীতি আদর্শ হতে কোন সদস্যই পদভ্রষ্ঠ হবে না। যদি সঠিক নেতৃত্বে বেকা পরিচালিত হয়। কিছু অজানা তথ্য খুব কঠিন হলেও বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। আকাশ যেমন রোদ শীতকে বিকশিত করে, তেমনই সুন্দর একটি কুয়াশা ঘেরা সকাল মিটিমিটি ঝলক দেয় সূর্য ঢলে রোদাময় বিশ্বকে। তাই বলে হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপা শীতে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা কর্মজীবী মানুষ কি কাজে যাবে না?সুন্দর একটি ঐতিহাসিক বিষয়গুলো পরিস্কারভাবেই বিকশিত হলো জন্ম রহস্য বেকা ইতিহাস।

লেখক- মোঃ মাহবুব আলম।

১৯৮৬ হতে ১৯৯৩ সন পর্যন্ত সিইউও এবং ক্যাডেট এডজুট্যান্ট ছিলেন। এর পূর্বে জাতীয় নির্বাহী পরিষদ (২০০৫- ২০০৭) তিনি যুগ্ম মহাসচিব সহ ২০০০-২০০১ নির্বাহী সদস্য ২০০৩-২০০৫ সচিব (জনসংযোগ প্রচার) এবং দুই মেয়াদ ২০১০-২০১৫ ২০১৭-২০১৯ সচিব (সাংগঠনিক) ছিলেন। বর্তমানে (২০২১-২০২৩) বেকা মুখপাত্র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।