Bangladesh Ex-Cadets' Association (BECA) UTC,UOTC & BNCC EX-MEMBER

History of the BNCC
History of the BNCC

অবিভক্ত ভারতের ১৪ তম ভাইসরয় (১৯১৬-১৯২১) লর্ড চেমসফোর্ড (Lord Chelmsford) তারই উদ্যোগে তৎকালীন সময়ে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় ঘরে যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেবার উদ্দেশ্যে University Traning Corps চালু করা হয়।  তিনি এ প্রকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করলে পরবর্তীতে স্বাধীন ভারত, পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে এ প্রশিক্ষণের বর্তমান ধারা বা রুপ পাওয়া যেত না। আমরা এই মহান ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাই।  তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।  ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ণের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড চেমসফোর্ড। তাঁর কার্যকাল ছিল ১৯১৬ থেকে ১৯২১ সাল। Cambridgeshire Regiment প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৮-০৭-১৯১৪ থেকে ১১-১১-১৯১৮) পর ভারতবর্ষের ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ড অনুরূপ প্রশিক্ষণ ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু করার জন্য প্রচেষ্টা নেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টে ITF Act বা The Indian Tretorial Force Act এর প্রস্তাব তোলেন এবং ১৯২০ সালের ১লা অক্টোবর বিল পাশ হয়। ঐ তারিখ থেকেই বিলটি কার্যকরী হয়। বিভিন্ন সালে প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন বিষয়ে বিলে সংশোধন আনা হয়। লর্ড চেমসফোর্ড এর উদ্যোগে ও পরিকল্পনায় ইউটিসি'র কার্যক্রম শুরু হয়। কাজেই তাকেই ভারতবর্ষে ইউটিসি'র প্রতিষ্ঠাতা বলা যেতে পারে।  He is the founder of UTC.  

 

সূচনা: The UTC (The University Traning Corps ) ১৯২০ সালের ১ লা অক্টোবর থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত একই নামে চলে। ১৯৪২ সালের পর ১৯৪৩ সালে এ নাম পরিবর্তন করে The University Officers Traning Corps নাম রাখা হয়।  ১৯৪৩ সাল হতে ১৯৭৯ এর ২৩ শে মার্চ পর্যন্ত UOTC নামে চলে। ২৩ শে মার্চ ৭% এ নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর BNCC'র সৃষ্টি হয়।  BNCC এসেছে UOTC থেকে। UOTC এসেছে UTC থেকে।  UTC এসেছিল অন্য উৎস থেকে।  তাই BNCC বুঝতে হলে UOTC কে বুঝতে হবে।  UOTC আজকের BNCC'র আদি প্রতিষ্ঠান। আমরা পিছনে তাকিয়ে দেখি কিভাবে UTC এবং UOTC হতে BNCC 'রুপান্তর হলো।  

 

 ইউটিসি প্রতিষ্ঠাতা: ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের কথা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর শক্তি ও দূর্বল দিকগুলোর বিশ্লেষন করে সহায়ক বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে আলোচনা করা হয়।  সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সহায়ক বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে "The Indian Tretorial Force Act 1920- পাস করা হয়সহায়ক বাহিনী তৈরির উদ্দেশ্যে গঠিত Esher Committee on Territorial or Second Line Force in India, 1920- এর সুপারিশে IFT Act, ১৯২০ পাশের লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশ সমর শক্তিতে ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও নেতৃত্বের গুনাবলী সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাই ছিল পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় মূলমন্ত্র। এর ফলশ্রুতিতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গণে ইউনিভার্সিটি ট্রেনিং কোর চালু করা হয়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন করলে ১লা অক্টোবর ১৯২০ সালে পাশ করা হয়। এই সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড চেমসফোর্ড (১৯১৬-২১)। তাঁরই স্বাক্ষরে ইউটিসির জীবনযাত্রা শুরু  

 

UTC Act (ইউটিসি আইন):  ১৯২০ সালে পাশ করা অপঃ-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে,  

i. The Indian Territorial Force Is Constituted By The Indian Territorial Force Act Of 1920 As Amended By The Act Number xxxi Of 1923 And The ITF Amendment Act of 1928.  

ii. All Persones Enrolled Under The Act Are Subject To Its Provisions And To The ITF Rules Made There Under By The Governor General In Council And By The Commander-In-Chief Of India.  

 iii. The ITE Is Composed of Provincial Units: A) The Medical Branch, B) Urban Units And C) University Training Units. 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে UTC-র সূচনা: ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।  স্থাপনকালের প্রেক্ষিতে এটি বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।  ১৯২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ UTC খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের Executive Council উপাচার্য PJ Hartog VC (১ম ভিসি) বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার জন্য অনুরোধ জানায়।  তিনি Calcutta University Corps এর অফিসার কমান্ডিং এবং এ্যাডজুটেন্ট এর সঙ্গে আলোচনা করেন।  বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য একটি ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।  যার প্রধান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ভাইস চ্যান্সেলর Mr. George Harry Langley অন্য সদস্যরা হলেন: Major Macpherson, Commander E F. R., Captian Groom, Adjt: E. B. Coy (AFI), Dr. MP West, MA, Ph.D (Oxon), Principal Teachers Trg College, Provosts of S. M. Hall, Provosts of Dhaka Hall, Provosts of I. N. Hall. Fida Ali Khan.  

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিসি প্রতিষ্ঠার জন্য পত্রালাপ: ১৯২৩ সালের ০৬ সেপ্টেম্বর কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, ট্রেনিং করা যেতে পারে।  বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি এবং আসামের জিওসি মেজর জেনারেল টি এ কুইন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ কোম্পানী ক্যাডেটের প্রশিক্ষণের অনুমতি দেন ১৯২৪ সালে। নামকরন করা হয় ঢাকা UTC 2nd Calcutta Battalion এর Adjt. (ট্রেনিং অফিসার) -কে ঢাকা UTC এ্যাডজুটেন্ট এর দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে, প্রস্তাবিত কোম্পানীর প্রশিক্ষণ কমান্ড করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যিনি ব্রিটিশ নাগরিক। তদানুযায়ী পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক D.W.A. Jenkins কে Dhaka UTC Gi Commanding Officer এর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য Secretary of State for India র নিকট প্রেরিত হয়   

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিসি প্রতিষ্ঠা: ১৯২৭ এর জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিসি'র ট্রেনিং শুরু করা হয়এসএম হল থেকে ২৮ জন জগন্নাথ হল থেকে ৪৪ জন, ঢাকা হল থেকে ১০০ জন ছাত্র যোগদান করেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উৎসাহ উদ্দীপনার কথা এইছ তে পৌঁছালে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে।  Secretary of State for India র অনুমতি নিয়ে জিওসি ১৯২৭ এর ০৬ই নভেম্বর ঢাকা UTC গঠনের সাময়িক আদেশ প্রদান করেন। তদনুযায়ী ১৯২৭ এর ১৬ই নভেম্বর অফিসিয়ালী প্যারেড এর কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ইউটিসি প্যারেড উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর জিএইচ ল্যাংলী।  ১৯২৭ এর ১৬ নভেম্বর তৎকালীণ পূর্ব বাংলা, বর্তমান বাংলাদেশের মাটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে বিএনসিসি'র আদি প্রতিষ্ঠান UOTC, UOTC 'র আদি প্রতিষ্ঠান UTC ভূমিষ্ট হয়  এক শুভ মুহুর্তে।  ঢাকা ইউটিসি ১৯২৮ এর ৯ জুন ১২ ঢাকা কোম্পানীরুপে করা হয় ।  ১৯৩৮ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি কোর্ট এবং এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল।  সরকারের নিকট আরো ২টি প্লাটুন মঞ্জুর করার জন্য আবেদন করেন।  এই সঙ্গে আরো অনুরোধ জানানো হয় যে ঢাকা শহরের ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্রদেরকে ইউটিসি-তে ভর্তির অনুমোদনের জন্য।  ১৯৪০ সালের আগস্টে ঢাকা ইউটিসি'র শক্তি ৩ জন অফিসার সহ ১১৪-তে উন্নীত করার অনুমতি পাওয়া যায়  

 

UTC কে UOTC রুপান্তর : ১৯৪০ সালে এ্যাক্ট সংশোধন এনে ইউটিসি নাম পরিবর্তন করে ইউওটিসি (ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর) প্রবর্তন করা হয়। ১৯৪৪ সালে ক্যাডেট সংখ্যা ১১৪ থেকে ১৫৪ তে উন্নীত করা হয় (৫ জন অফিসার সহ ) দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৩৯-১৯৪৫) ১৯৪৩ সালে ইউটিসি নাম পরিবর্তন করা হয় এবং ইউওটিসি তে রুপান্তরিত হয়।  ১৯৪৫-র ০২ জুলাই মাসে ব্রিটিশ সরকার কমিটি গঠন করেন যাতে স্কুল এবং কলেজে যুবকদের সামরিক প্রশিক্ষন দেওয়া যায়।  এর জন্য সামরিক বিভাগের সেনা, নৌ, বিমান এবং শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের মেধাবী অফিসারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়।  এই কমিটির সম্পাদক হবেন মিলিটারি ট্রেনিং এর ডাইরেক্টর। এই কমিটির ১ম মিটিং অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২রা আগষ্ট দিল্লীতে।  এই কমিটির ১ম প্রেসিডেন্ট ছিলেন লো কর্ণেল ইচ্ছান্দর মির্জা (যিনি পাকিস্তান সৃষ্টির কিছুদিন পরে গভর্নর জেনারেল এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন)।  তারা সব স্কুল, কলেজ এ ক্যাডেট কোর খোলার স্বপক্ষে মত পান।  ১৯৪৬-এর সেপ্টেম্বরে আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়।  এ কমিটির সভাপতি ছিলেন পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং বলদেব সিংহকে রাখা হয় (ডিফেন্স মন্ত্রী)।  ১৯৪৬-এর ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় রেজিসলেটিভ এ্যাসেমবিলির সদস্য পণ্ডিত হৃদয়নাথ কৃষ্ণ কে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়।  দেশ রক্ষা বিষয়ে তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞা  

 

ভারতে এনসিসি সৃষ্টি: ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭-এর আগষ্টে। সৃষ্টি হয় পাকিস্তান একই সাথে। এরপর স্বাধীন ভারতের নেতৃবৃন্দ ইউওটিসি নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সার্চ করেন ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে।  কিন্তু পাকিস্তানে এর কোন পরিবর্তন আনা হয়নি।  ১৯৪৬ সালের ১৬ই জুলাই, মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জাকে সভাপতি করে।  মীর্জা সাহেব পাকিস্তানে চলে এলে তার সভাপতিত্বে কমিউজ সুপারিশে এনসিসি এ্যাক্ট, ১৯৪৮ ভারতীয় পার্লামেন্টে Act No. XXXI of 1948 রূপে পাস হয এবং সারা ভারতে এনসিসি স্থাপিত   

 

কোম্পানী থেকে ব্যাটালিয়নে উন্নীত ও নামকরন : ১৯৪৮ সালের ৩১ জানুয়ারী একটি মাত্র ইউনিটকে ব্যাটালিয়নে উন্নীত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভ এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর ইউওটিসি প্রশাসন ১৯৪৮ এর ৩১ জানুয়ারী এক পত্র মাধ্যমে কোম্পানীকে পূর্ণ ব্যাটালিয়নে উন্নীত করার জন্য জোর আবেদন জানানো হয়।  পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি মেজর জেনারেল (পরে ফিল্ড মার্শাল) মোহাম্মদ আইউব খানের সুপারিশ ক্রমে ১৯৭ এর ১ ডিসেম্বর ৬৪৭ (২২ জন অফিসারসহ) নিয়ে একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়।  এই সময় মোঃ মতিউর রহমানকে লেফটেন্যান্ট থেকে ক্যাপ্টেন পদে (বিটিএফও) উন্নীত করা হয় এবং ভারপ্রাপ্ত ব্যাটালিয়ন কমান্ডার নিয়োগ দেয়া হয়।  ঢাকা ব্যাটালিয়ন ইউওটিসিকে East Pakistan Battalion UOTC নামে চিহ্নিত করা হয়  

 

ইউওটিসি বন্ধ ঘোষণা: তৎকালীন সময়ে বঙ্গদেশের পূর্ববঙ্গে একটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গনে ইউওটিসি'র সৃষ্টি।  বাংলাদেশের ইউওটিসি জন্ম এখানেই ।  শৈশব, বাল্য, কৈশোর কেটেছে এখানেই।  প্লাটুন, কোম্পানী এবং ব্যাটালিয়নে উপনীত হতে না হতেই বাধার সম্মুখীন।  ব্যাটালিয়ন গঠন করে একে হাটাবার পূর্বেই থমকে দাঁড়াতে হলো।  পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চলমান ইউটিসিকে অর্থের অভাব দেখিয়ে বন্ধ ঘোষনা করা হলো।  ইউএটিসিকে অসাড় বিবেচনা করে বন্ধ ঘোষনা করা হলো। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে রাওয়ালপিডিই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা, দিল্লিতো হাতের মুঠোয়, এই বুলিতে ইউওটিসি অসার বিবেচিত বলে ইউওটিসি ডিসব্যান্ড করা হলো, ১৯৫২ সালে সময় ছিল ১৯৫৩ সালের জুন মাস।   

 

১৯৫৩ সালের অক্টোবর মাসেই ইউওটিসিকে বাঁচিয়ে রেখে সামনে এগিয়ে যাবার হুকুম জারী করা হয়।  কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ইউওটিসি ইউনিট গুলো Were kept in suspended animation. ইউওটিসি'র কার্যক্রম পুনঃস্থাপিত হলো, ITF Act PTF Act -রুপান্তরিত হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টর ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান (PTFO) পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন সৃষ্ট মন্ত্ৰী (Chief Minister) মি. নুরুল আমিনকে বিষয়টি জানানো হলে এ দেশের যুবকদের সামরিক শিক্ষার প্রাথমিক বিষয় শিক্ষা দেবার জন্য ইউওটিসি-ই একমাত্র মাধ্যম। মি. নুরুল আমিন বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী মোহাম্মদ আলী-কে জানান। এই সময় ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে ৪টি ইউটিসি ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন  

 

১৯৫৫ সালের পরে ইউওটিসি আবারো চালু: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিভাগের অফিসার (পরিবর্তীতে ডাইরেক্টর) লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ মতিউর রহমান। বাংলাদেশের সৃষ্টির পূর্বে, পাকিস্তান আমলে এ পদ আর কেউ প্রাপ্ত হননি। তারই পরিচালনায় ইউওটিসি-র সীমিত আকারে উন্নতি ও বিস্তৃত ঘটেছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে স্থাপিত হওয়ার পর ১৯৫৬ সালে এখানে ইউএটিসি খোলার জন্য আবেদন জানানো হয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর কর্তৃপক্ষ দুধর্ষ চতুর্দশ ডিভিশন, (The Fercious 14 Division) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউওটিসি খোলার হুকুম দেন। এ সঙ্গে এর অধিভুক্ত কয়েকটি কলেজও খোলা হয়। এর মধ্যে পড়ে খুলনার দৌলতপুর বি এল কলেজ কন্টিনজেন্টরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ এবং দৌলতপুরের বি এল কলেজ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ব্যাটালিয়নের বি কোম্পানী গঠিত ছিল। এ সময় ঢাকা ব্যাটালিয়নের নতুন নামকরণ করা হয় EAST Pakistan Battalion UOTC বা পূর্ব পাকিস্তান ব্যাটালিয়ন ইউওটিসি।  

 

ইউওটিসি'র কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ পর্যায়ে প্রসারিত: ১৯৫৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, রাজশাহী কলেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ, ঢাকা কলেজ, মুরারী চাঁদ কলেজ, সিলেট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং আরো কয়েকটি প্রথম শ্রেনীর কলেজ ইউওটিসি খোলা হয়   

 

পূর্ব পাকিস্তান ব্যাটালিয়ন ইউওটিসি প্রথম বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প: ১৯৫৬ এর ডিসেম্বর মাস। ইস্ট পাকিস্তান ব্যাটালিয়ন ইউওটিসি'র প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ৪০ জন করে ক্যাডেট ও বিটিএফও এবং পিইউও সহ ৬৪৭ জন ক্যাডেট ও ২২ জন অধ্যাপক সিলেটের স্যালুটিকেয়ার-এ উপস্থিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন এবং কলেজের ৪০ জন ক্যাডেট ক্যাম্পে যোগদান করেন।  ১৫ দিনের জন্য শৃঙ্খলপূর্ণ পরিবেশ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কাজ সম্পন্ন করতে হয়।  রান্নাকৃত খাবার সামরিক বিভাগ থেকে প্রেরিত ডাক্তার কর্তৃক নিশ্চিত হওয়ার পরই সবাই খাওয়ার সুযোগ পায়।  এই সময় ৬২৫ জন নিয়ে ব্যাটালিয়ন গঠিত ছিল।  ক্যাম্প চলাকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের চাফ মিনিস্টার খান আতাউর রহমান ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন করেন, তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়  

 

UOTC রাইজিং ক্লাব একটি গর্বের বিষয় ১৯৫৭ সালের কথা। পূর্ব পাকিস্তান ব্যাটালিয়ন ইউ এটিসির এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে যোগদান করেন ৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরী।  মেজর, মতিউর রহমান (সিও) এবং ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর উদ্যোগে একটি রাইডিং ক্লাব গড়ে ওঠে।  আনওয়ারুল হক (খান মজলিস (যিনি বেকার প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান) ছিলেন ইউওটিসি'র সঙ্গে জড়িত।  তিনি ছিলেন একজন সিনিয়র "আন্ডার অফিসার। তারই প্রচেষ্টায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৬টি ঘোড়া ক্রয় করা হয়।  তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর সুলতান উদ্দীন আহমদ রাইডিং স্কুলের উদ্বোধন করেন।  গবাদি পশু ও ঘোড়া প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন গর্ভনর লেঃ জেনারেল আযম খান।  ইউওটিসি'র ইতিহাসে রাইডিং স্কুল এক অনন্য ভূমিকা রেখেছে। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত পিরিয়ডে ইউওটিসি'কে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।  ১৯৬০-এর পর এতগুলো ঘোড়া (প্রায় ১০টি) সংরক্ষণ, নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে দাড়ায়। ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী বদলী হয়ে সামরিক ইউনিটে যোগদান করেন। ঘোড়াগুলি শেষ পর্যন্ত কিছু বিক্রয়, কিছু মারা যায় তার পরে রাইডিং স্কুল বন্ধ হয়ে যায়  

 

মতিউর রহমানের পদোন্নতি: ১৯৫৯ সালে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানকে Substantive rank of Major প্রদান করে ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।  ১৯৬১ সালের ১৮ অক্টোবর তাকে লেঃ কর্ণেল পদে পদোন্নতি দেয় হয়। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম ব্যক্তি যিনি ঐ পদে ভূষিত হন।  (পিটিএফও এবং বিটিএফও দের মধ্যে)। লো কর্ণেল মোঃ মতিউর রহমান ইউওটিসি'বলয়ে এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব   

 

ইউওটিসি'র রি-ইউনিয়নমিলিটারি সাইন্স পরীক্ষা শুরু: ১৯৬৩ সালে প্রথম ইউওটিসি রি-ইউনিয়ন বা প্রথম বারের জন্য পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৮ জানুয়ারী শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি (ইউওটিসি-ও সাবেক সদস্য), শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহন করেন। ১৯৬৪ মিলিটারি সাইন্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৪০, সিনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ১২ জন উত্তীন্ন হয় এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এই বছরই ইউওটিসি-র ক্যাডেটদের মধ্যে থেকে যোগ্যতা ভিত্তিতে জন ক্যাডেটকে PMA Long Course এর জন্য সিলেকশন দেয়া হয়  

 

পিসিসিজেসিসি প্রতিষ্ঠা: পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে ব্যাপক সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।  ফলে ইউওটিসি ছাড়াও কলেজের ছাত্রদের নিয়ে পাকিস্তান ক্যাডেট কোর (পিসিসি, স্বাধীনতার পর যার নাম হয় বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর বা বিসিসি) এবং স্কুলের ছাত্রদের নিয়ে জুনিয়র ক্যাডেট কোর (জেসিসি) গঠন করা হয়সারাদেশে ১৭টি ব্যাটালিয়নের ক্যাডেট সংখ্যা ছিল ৮,৫০০ জন এবং জেসিসি'র ৮ ব্যাটালিয়নের,০০০ জন ক্যাডেট ছিল।  

 

ক্যাডেট প্রশিক্ষণের ৩টি ধারা: ১৯৬৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং স্কুলে প্রশিক্ষণের ৩টি ধারা প্রচলিত ছিল যথা ইউওটিসি, পিসিসি, জেসিসি। বাংলাদেশ এগুলো ইউওটিসি, বিসিসি, জেসিসি নামে চলে আসছিল।  

 

স্বাধীনতা যুদ্ধে UOTC ক্যাডেটদের বীরত্ব গাথা ভূমিকা: ১৯৭১-এ পাক সেনাবাহিনীর অগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউওটিসি'সদস্যবৃন্দ এক অনন্য ভূমিকা পালন করেন।  বহু অফিসার ও ক্যাডেট সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে ইউএটিসি-র এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এ প্রয়োজনীয় মুহুর্তে তারা প্রমান করেন যে দেশ প্রেমিকের রক্তই স্বাধীনতা বৃক্ষের বীজস্বরুপ।  স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে প্রতি বছরেই বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ক্যাডেট ও অফিসারবৃন্দ উন্নত মানের প্রশিক্ষণসহ রাইফেল, পিস্তল, রিভলভার, এলএমজিএসএমজি ফায়ারিং-এর সুযোগ পেতেন।  মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এড-ক্যাডেট মুক্তিযুদ্ধাদের তালিক প্রকাশ করা হলো। এমন অনেক ক্যাডেট মুক্তিযুদ্ধা অকুতোভরী দেশ স্বাধীনতার সংগ্রামের ঝাপিয়ে পড়ে শহীদ হয়েছেন  নিম্নে তাঁদের নাম দেওয়া হলোঃ (১) ঢাকা কলেজের ক্যাডেট শহীদ কর্পোরাল শহীদ আলী আহসান চাকলাদার (কাঞ্চন) গত ২৬ মার্চ ১৯৭১ ঢাকাতে শহীদ হন () মো কলেজের ক্যাডেট শহীদ মোঃ রহিম উল্লাহ গত ০৪ এপ্রিল ১৯৭১ বেলোনিয়া সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।  (৩) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালে শহীদ ফরহাদ হোসেন গত ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ করিমপুর কক্সবাজারে সেনা ক্যাম্পে শহীদ হন।  (৪) ফেনী কলেজের ক্যাডেট প্রধান মোহাম্মদুল্লাহ গত ১৬ এপ্রিল ১৯৭১ বেলোনিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।  (৫) ফেনী কলেজের ক্যাডেট শহীদ সিরাজুল ইসলাম মিয়া গত ১৭ মে ১৯৭১ ফেনী শহরে শহীদ হন।  (৬) ফেনী কলেজের ক্যাডেট সার্জেন্ট শহীদ আবু তাহের ভূইয়া গত ১০ আগামী ১৯৭১ ফেনী শহরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।  (৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডেট সাটে শহীদ ইমাম শাফী কর্মী গত ০৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ ঢাকায় আটক অবস্থায় নির্মম নির্যাতন করার কারনে তার মৃত হয় কিন্তু তার শহীদ হওয়ার সঠিক তারিখ জানা যায়নি।  (৮) UOTC সদর দপ্তরের লক্ষর (ক্যাডেট সার্জেনী চট্টগ্রাম কলেজ) শহীদ শামসুল হক মজুমদার গত ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ কক্সবাজার রোড, ঢাকায় গুণীতে শহীদ করা হয়।  (৯) ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল শহীদ মেজবা উদ্দিন নৌফেল গত ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ ফরিদপুর শহরে শহীদ হন।  (১০) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডেট সার্জেন্ট শহীদ রতন ঢাকাতে পাক সেনারা তাঁকে থম করে। তাঁর শহীদের সঠিক তারিখ জানা নাই।  (১১) দিনাজপুর পৌরসভা ফুল (বাংলা স্কুল) এর ICC ল্যান্স কর্পোরাল শহীদ মোঃ হাসেম আলী গত ০৬ জানুয়ারী ১৯৭২ অস্ত্র জমা দিতে গিয়ে পাক সেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে দিনাজপুর মহারাজা জি এন স্কুলে শহীদ হন।  (শহীদের তারিখ অনুযায়ী ক্রমন্বয়ে তালিকা দেওয়া হলো) সকলের কাছে অনুরোধ, যদি এছাড়াও কোন শহীদ ক্যাডেট মুক্তিযোদ্ধা থাকেন তবে সঠিক তথ্য দিন। উল্লেখিত শহীদের তালিকা। হতে যদি কোন শহীদ পরিবার- পরিজন পরিচিত থাকে তবে তাদের অবস্থান বেকা সদর দপ্তরকে জানান।   

 

ইউটিসি, ইউওটিসি এবং বিএনসিসি-র জন্মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউওটিসি ভবন ছিল সাবেক ইউওটিসি-র কেন্দ্র বিন্দু।  ১৯৭৬ সালে ছাত্রীদের ইউওটিসি-তে অংশগ্রহনের চেষ্টা করা হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অংশগ্রহন ছিল প্রশংসনীয়।  ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে ৩টি ব্যাটালিয়নের সৃষ্টি করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা রমনা ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে পরিণত হয়বিএনসিসি সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত এবং এখন পর্যন্ত বিএনসিসি-র বলয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ভূমিকা ও গুরুত্ব সমভাবেই বিদ্যমান। আজকের বিএনসিসি ও বিশাল কর্মকান্ডে শক্ত ভিত রচিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে।  পরবর্তীতে রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইউওটিসি এবং বিএনসিসি সম্প্রসারণে বিশেষ অবদান রেখেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ৫ বছ (১৯৭১-১৯৭৫) ইউওটিসি-র কার্যক্রম মূলত বন্ধ থাকে। এমতাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বিটিএফ অফিসারের উদ্যোগে ১৯৭৬-এর মার্চ এ ইউওটিসি প্রাণ ফিরে পায়। এরই ফলশ্রুতিতে এই স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন বিএনসিসি নামে নবরুপ লাভ করে।  

 

স্বাধীন বাংলাদেশে UOTC: স্বাধীনতার পর ইউওটিসি-ও স্বরুপ বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করতে দেশ পরিচালকদের দীর্ঘ সময় লেগে যায়।  ১৯৭৩-এ ইউওটিসি অনুমোদন পেলেও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ইউওটিসি'র জগতে এক বিমূঢ় বিস্ময়কর স্বকতা পরিলক্ষিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝে তিনি UOTC Training চালু করতে পারেননি।  ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়ে বিটিএফ অফিসার ও বেকা'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল মোঃ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে, ক্যাপ্টেন ডাঃ জিয়াউদ্দীন আহমদ, লেফটেন্যান্ট এ জেড শিকদার এবং লেঃ শাহাদত আলী এবং আরো অনেকের উদ্যোগে ইউওটিসি-ও কর্মকান্ড পুনর্জীবিত করার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।  ফলে ১৯৭৬-এ তিনি বার্ষিক ক্যাম্পের অনুমতি প্রদান করেন  

 

বাংলাদেশে ৩টি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা ও প্রথম বার্ষিক ক্যাম্প: ১৯৭৬ সনের মার্চ মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অভিবাদন গ্রহণ করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।  ছাত্রীরাও এ কুচকাওয়াজে অংশগ্রহন করেন। সমস্ত বিষয়টি তাঁকে মুগ্ধ করে।  রাষ্ট্রপতির নির্দেশেই ইউওটিসি'র কার্যক্রম সম্প্রসারণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এর পর পরই তিনটি নতুন ব্যাটালিয়ন স্থাপনের ঘোষণা দেয় হয়।  রমনা ব্যাটালিয়ন- ঢাকা, চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়ন, রাজশাহী ব্যাটালিয়ন বিএনসিসি গঠনের পূর্ব পর্যন্ত এই তিনটি ব্যাটালিয়ন পৃথকভাবে বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়  যেমন, রাজশাহী ব্যাটালিয়ন ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে নওহাটা এয়ার পোর্ট এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ক্যাম্প করা। চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়ন ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ এ পৃথক ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।  এ অবস্থা চলে ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত।  ১৯৭৭-এ রাজশাহী ব্যাটালিয়নের প্রথম বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী এয়ার পোর্টের সন্নিকটে নওহাটা হাই স্কুল।  হাইস্কুলে ক্যাডেটদের আবাসিক এলাকা হলেও এয়ারপোর্টেই প্রশিক্ষণের কাজ সম্পন্ন হতো। এখানেও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। দেশের প্রতিরক্ষা উন্নয়ন কর্মকান্ডে মহিলাদের অংশগ্রহন অতি প্রয়োজন একথা ভেবেই ১৯৫৮ সালেই তাদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।  কিন্তু নানাবিধ বাস্তব প্রতিকূল অবস্থায় কথা ভেবেই বার্ষিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদেরকে নেয়া হয়নি।  

 

১৯৭৬ সালে সে বাধা কাটিয়ে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে মহিলা ক্যাডেটরা অংশগ্রহন করেন।  সামরিক প্রশিক্ষণের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভেবেই প্রশিক্ষণ পরিকল্পনায় এক বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করা হয়।  কিন্তু ইহা খুব ব্যয় বহুল ভেবেই এ প্রশিক্ষণের প্রবর্তনের জন্যই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তৎকালীন জনশিক্ষা পরিচালনাধীন পাকিস্তান ক্যাডেট কোর ও জুনিয়র ক্যাডেট কোর (PCC and JCC) ১৯৬৬-৬৭ সালে খোলা হয়বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ তিনটি প্রধান ধারায় প্রবাহিত হচ্ছিলা UOTC, PCC and JCC এ তিনটি স্রোতের আওতাভুক্ত ক্যাডেটদের মধ্যে উৎসাহ, শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বেও গুণাবলী লক্ষ্য করে বাংলাদেশ।  সরকার উপরে উল্লেখিত ধারাকে একই কমান্ডের অধীনে এনে পরিচালনার জোর সুব্যবস্থা নেয়া হয়।  UOTC, BCC and JCC নামগুলোর বিসর্জনের বাজনা শোনা গেল। ইতিহাসের গতি বড় নির্মম, বিস্ময়কর এবং আঁকা বাঁকাই বটে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে ৫/৬ বছর ইউওটিসি অকার্যকর থাকে সম্পূর্ণ অবলুক থেকে একে বাঁচিয়ে রাখেন ২/৩ জন বিডিএফ অফিসার।   

 

UTC, UOTC কে BNCC তে রুপান্তর: ১৯৭১ সালে এই কোরের সদস্যবৃন্দ স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্যি অংশগ্রহণ করে এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে দেশের স্বাধীনতা লাভে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখে। তদানীন্তন ব্যাটালিয়ন অ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন এম আব্দুল মতিন (মেজর জেনারেল অব.), এবং UTC UOTC-র ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব বেকা'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লেঃ কর্ণেল মোঃ মতিউর রহমান (অবঃ), বিটিএফ অফিসার লেফটেন্যান্ট ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ (পরবর্তীতে লে. কর্ণেল অব.), লেফটেন্যান্ট আবু জায়েদ শিকদার (পরবর্তীতে লে. কর্ণেল অব.), সেকেন্ড লেফটেন্যান্টড, মোঃ শাহাদত আলী (পরবর্তীতে লে. কর্ণেল অব.), সহ সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে সংগঠনটি পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালের ২৩ মার্চ এক সরকারি আদেশ বলে তদানীয়ন ইউওটিসি, বিসিসিজেসিসিকে একত্র করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর এ রুপান্তরিত করা হয়। তখন থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের অগ্রযাত্রা। ১৯৭৯ সালের ২৩শে মার্চ সরকারি আদেশ পত্র নং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা ৪৮/৭/ডি ১/৭৬/২/২ তারিখ। ২৩.৩.৭৯ বরাতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর এর জন্ম।  এর আবির্ভাব, এর উদ্দেশ্য এবং পরিচালনা পদ্ধতি সব বিষয়ের রূপরেখা তৈরি হয়। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি পৃথক পরিচালনালয় বা ডাইরেক্টরেট। বর্তমানে অধিদপ্তর। যা ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে ৪৬নং আইন হিসেবে বিএনসিসি আইন করা হয়   

ইউটিসি, ইউওটিসি এবং বিএনসিসি'বিবর্তনঃ  

ইউটিসি - ০১ অক্টোবর ১৯২০ হতে ১৯৪২ পর্যন্ত।  

ঢাকা ইউটিসি - ০৯ জুন ১৯২৮ ইউটিসি ১২ কোম্পানী নামে।  

ইউওটিসি - ১৯৪৩ থেকে ২৩ মার্চ ১৯৭৯ পর্যন্ত। 

ঢাকা কোম্পানী ইউওটিসি - ১৯৪৩ থেকে ১ ডিসেম্বর ১৯৫০ পর্যন্ত।  

ঢাকা ব্যাটালিয়ন ইউটিসি ১ ডিসেম্বর ১৯৫০ থেকে ২৩ মার্চ ১৯৭৯ পর্যন্ত।  

বিএনসিসি - ২৩ মার্চ ১৯৭৯ থেকে ২২ ডিসেম্বর ২০১৬  

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর - ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে চলমান। এ্যা 

 

ক্টের বিবর্তনঃ  

() UTC Indian Territorial Force Act (ITF): ১৯২০- এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।    

() ১৯২৩ সালে এ্যাক্ট নং- XXX বা ৩১ নং এ্যাক্ট এর মাধ্যমে ITF গঠিত হয় কয়েকটি ইউনিট নিয়ে  

() UOTC. Indian Territorial Force Act (ITF): ১৯৪০ (Amended)- এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।   

() BNCC প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা ৪৮/৭/ ডি১/৭৬/২/২ তারিখ ২৩ মার্চ ১৯৭৯- এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।  

() বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর আইন- ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬।  

 

ফোর্সের বিবর্তন:  

() ITFO - Indian Territorial Force Officers  

() PTFO - Pakistan Territorial Force Officer.  

() BTFO - Bangladesh Territorial Force Officer.  

() BNCCO- Bangladesh National Cadet Corps Officer  

 

মটোর বিবর্তন:  

() ইউওটিসি- একতা (Unity)- বিশ্বাস (Faith) শৃঙ্খলা (Discipline)  

() বিএনসিসি- জ্ঞান (Knowledge) - শৃঙ্খলা (Discipline) - একতা (Unity)  

() বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর- জ্ঞান (Knowledge) - শৃঙ্খলা (Discipline)- ভলেন্টিয়ার (The Volunteers) লেখক:  

 

প্রফেসর মেজর বি করিম বিটিএফও (অব:) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫৬-৫৯ সনের এক্স ক্যাডেট এবং ১৯৬৫ সাল হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনসিসি'বিটিএফ অফিসার ছিলেন। তিনি ৫৬টি বই প্রকাশ করেছেন। “বিবর্তনে বিএনসিসি” বই লিখে তিনি বিএনসিসি'র ইতিহাস ও ঐতিহ্য সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন